চাঁপাইনবাবগঞ্জনিউজ, ২৯ মার্চ ২০১১:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি বরই (কুল) বাগানে চলছে আসর। তখনও সন্ধ্যা হয়নি, আসরে যোগ দেয়া এক ব্যক্তি তার পকেট থেকে একটি ছোট্ট বোতল বের করে দাম বললেন ১৬ শ টাকা, তবে ১৫ শ টাকায় দেয়া যাবে। হাতের মধ্যে থাকা সেই বোতল দেখে আসরে থাকা অন্য একজন যেন হামলে পড়ে এমন অবস্থা। শেষপর্যন্ত বোতলটি বিক্রি হলো ১১ শ টাকায়। ছোট্ট ওই বোতলটি মাদকের। ফেন্সিডিলে চরম আসক্ত ওই ব্যক্তি ১১ শ টাকায় কিনে নিলো ফেন্সিডিলের বিকল্প মাদক রেকোডেক্স। এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ আসছে ফেন্সিডিলের মতই ছোট ছোট বোতলজাত বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। সীমান্ত পার হয়ে আসা রেকোডেক্স, কোরেক্স, কোডোরিকসহ বিভিন্ন নামের মাদকের বোতলে রয়েছে ফেন্সিডিলের সব উপদাদনই। তাই ফেন্সিডিল আসক্তদের কাছে ‘প্রিয়’ বস্তুতে পরিণত হয়ে উঠেছে রেকোডেক্স, কোরেক্স, কোডোরিক। ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, মাদকসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে দেশের বিভিন্নস্থানে রেকোডেক্স-এর ব্যাপক চাহিদার কথা।

সীমান্ত এলাকা ঘুরে জানাগেছে, ভারতের শক্তিশালী মাদক চোরাচালান সিন্ডিকেট সেদেশের সীমান্ত রি বাহিনীকে ম্যানেজ করেই দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে রেকোডেক্স পৌছে দিচ্ছে ফেন্সিডিলের মত করেই। কার্টনে আবার কখনো বস্তা বন্দি করে শত শত বোতল রেকোডেক্স ও কোরেক্স-এর চালান নির্বিঘ্নে চলে আসছে। দেশের মাদক চোরাচালানীরা সীমান্ত থেকে নিজেদের ‘আস্তানায়’ নিয়ে সময় সুযোগ বুঝে বিভিন্ন কৌশলে তা পাচার করে দিচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। ওই সূত্র জানিয়েছে, ভারতের ওই মাদকদ্রব্যগুলোর বিক্রি মূল্য ৬৬ রূপী বোতলের গায়ে লেখা থাকলেও বাংলাদেশে পার্টি ভেদে দাম নেয়া হয় আড়াই শ থেকে সাড়ে তিন শ টাকা। আর দেশের বাজারের এসে তার দাম গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৭শ থেকে ৯ শ টাকায়। কখনো কখনো তা হাজারও ছুয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘ দিন ফেন্সিডিলের ব্যবসা করা চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার দুই মাদক ব্যবসায়ী দেশের ফেন্সিডিলের পাশাপাশি রেকোডেক্স ও কোরেক্সের চাহিদা দেখে এ ব্যবসা করতে গিয়ে সম্প্রতি বিজিবি সদস্যের হাতে ধরাও পড়েছে। তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর নানান তথ্য। ফেন্সিডিলের মতই বোতল হলেও রেকোডেক্স-কোরেক্স’র বোতল তার থেকে সামান্য ছোট। মাদকসেবীদের কাছে তা বহন করা খুবই সহজ। তাছাড়া, সীমান্তের ওপারে গজিয়ে উঠা নকল ফেন্সিডিলের কারখানাগুলো থেকে আসা ভেজাল ফেন্সিডিলে আগের মত নেশা না হওয়ায় মাদকাসক্তরা ঝুকে পড়ছে রেকোডেক্স, কোডোরিক, কোরেক্স’র প্রতি।
বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীরা মহাসড়কের পাশাপাশি রোকোডেক্স পাচারের ‘নিরাপদ’ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের পথ। বিজিবি’র এক কর্মকর্তা জানান, একটা ভিন্ন অথবা নতুন 'ফ্লেভার' পেতেই মাদকসেবীরা রেকোডেক্সে দিকে ঝুকছেন। আটক দুই পাচারকারীও বিডিআরের কাছে এর সত্যতা স্বীকার করেছে। দুই পাচারকারী রুবেল ও আব্দুল হাকিমের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই কর্মকর্তা জানান, যারা নিয়মিত মাদক সেবন করেন তারা ব্যবসায়ীদের কাছে এসে প্রথমে রোকেডেক্স খোঁজেন। তবে ফেন্সিডিলের চেয়ে রেকোডেক্সের মুল্য বেশি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জস্থ ৩৯ বিজিবি ব্যটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু বকর আবু জানান, মাদক বিরোধি তৎপরতার অংশ হিসেবে বিডিআর রেকোডেক্স নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই কাজ করে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি’র একটি বিশেষ দল গোমস্তাপুর-বোয়ালিয়া এলাকা দিয়ে পাচারের সময় ১৬ বোতল রেকোডেক্সসহ দুই মাদক পাচারকারীকে গোমস্তাপুরের বড়বঙ্গেস্বরপুর গ্রামের মৃত ফেনেসের ছেলে মোঃ রুবেল ও আজাহার আলীর ছেলে আব্দুল হাকিমকে আটক করে। তিনি জানান, আটক হওয়ারা অনেক দিন ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। ১০০ মিলিলিটারের পেট (প্লাস্টিক) বোতলে রেকোডেক্স বাজারজাত করা হচ্ছে। যদিও ফেন্সিডিল ছিল কাচের বোতলে। তবে রেকোডেক্স ও ফেন্সিডিলের ব্যবহৃত নেশার উপাদান কোডিনের অনুপাত অভিন্ন। দুটি ব্র্যান্ডেই কোডিন রয়েছে প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ১০ এমজি। আটক রেকোডেক্সের বোতলের লেবেলে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা আছে ‘বায়োজেনেটিক (প্রা.) লিমিটেড, ইন্ডিয়া’।
পোষ্ট/অলক/চাঁপাই
0 comments :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন