
চাঁপাইনবাবগঞ্জনিউজ ২৬ মার্চ ২০১১:
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে শহীদি তালিকায় প্রিয় সন্তানের নাম শুধুই ‘শোভা’ ছড়ালেও বিধির বেড়াজালে আটকা পড়ে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের এক শহীদ মাতা। সরকারিভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, সন্তান-সন্তোতিদের সুবিধাভোগের বিষয়টি নিশ্চিত থাকলেও মাতা-পিতার ক্ষেত্রে তা না থাকায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে সরকারের ঘোষণা করা কোন সুবিধায় পাচচ্ছেন না শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের মা আনোয়ারা বেগম। বার্ধক্যের শেষসীমায় ‘পরের ঘাড়ে বোঝা’ হিসেবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শহীদ মাতা আনোযারা। অথচ একটুকু সহযোগিতার আশায় সরকারের বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরেছেন দীর্ঘদিন ধরেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বালিগ্রাম। ছোট্ট ছোট্ট বেশ কিছু বাড়ী নিয়ে গড়ে উঠা বালিগ্রাম মহল্লায় বাস শহীদ মাতা আনোয়ারার। গর্ভে ধারণ করেছিলেন দুই পুত্র সন্তান। একটি দেশমাতৃকাকে বাঁচাতে জীবন উৎসর্গ করেছেন। অন্যটি শহীদুল ইসলাম বেঁচে আছেন। দিনমজুরী করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দিনমজুর ছেলে শহীদুল আর তার স্ত্রী একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের আয়া। তাই দিয়ে আর কতটুকু চলা যায়। অভাব-অনটনে এমনিতেই ছেলের সংসার চলেনা। তার উপর নিজেকে সন্তানের ঘাড়ে বোঝা হিসেবে চিন্তা করে এখন দুচোখে শুধুই অন্ধকার দেখেন শহীদ মা আনোয়ারা। ৮২ বছর বয়সে অন্যের করুণার পাত্র হয়ে দিন পার করা নয়, শহীদিমাতা হিসেবে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাকী দিগুলি কাটাতে চায়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও তার কাঙ্খিত মর্যাদা দিতে কেউ যায়নি। মুক্তিযোদ্ধা কিংবা শহীদি ভাতা এ দুটোর একটির জন্য জন্য বছরের পর বছর বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে ফিরেছেন সন্তান শহীদুলকে সঙ্গে নিযে আনোয়ারা। তুবুও মেলেনি সামান্য ভাতাটুকুও। অথচ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে নির্মাণ করা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে শহীদি তালিকায় শহীদ নজরুলের নাম শুধুই ‘শোভা’ ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা শহীদ নজরুলের মা-ভাইকে অভাব তাড়া করে ফিরছে প্রতিনিয়তই তাঁর রক্তে স্বাধীন বাংলাদেশে।

ছেলে দিনমজুর শহীদুল ইসলাম বালিগ্রামের একটি আম বাগানে কোন রকমে একটি বাড়ি তৈরী করে সেখানেই মাকে নিয়ে বসবাস করেন। শহীদ মা আনোয়ারা জানালেন, ছেলের ঘারের বোঝা হিসেবে এখন তার দিন কাটছে। কেউ কোন দিন খোজ নিতে আসেনি। সহায়তার হাতও বাড়িযে দেযনি। শহীদ নজরুলের ভাই শহীদুল তাই আক্ষেপ করে বললেন, ‘জীবন দিয়ে মনে হয়, আমার ভাই ভুলই করেছিল। অনেক টাকা ওয়ালা বড়লোক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাচ্ছে। অথচ আমার মা খেতে পাচ্ছেনা ভাতাও পাচ্ছেনা। বছরের পর বছর সংশ্লিষ্টদের গোচরের বাইরে থাকা আনোয়ারার পরিবারের কথা শুনে গেল শীতে জেলা প্রশাসক কেএম আলী আজম করুন কহিনী শুনে প্রশাসনের প থেকে তীব্র শীত নিবারণের জন্য একটা কম্বল, কিছু ফলমুল ও টাকা সহযাতা দিয়েছিলেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক কেএম আলী আজম জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে দেখেও এসেছি। তারা মুক্তিযোদ্ধার কিংবা অন্যভাতা পায়নি। তারা করুণ অবস্থার মধ্যে থাকার পরে ভাতা পাচ্ছেনা নীতিমালার একটু সমস্যার কারণে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী না থাকলে তার পিতা বা মাতার ভাতা পাওযার বিধান নেই। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ড ক্উান্সিল অথবা অন্যকোন যায়গা থেকে সহযোগিতার করার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তবে নজরুল নজরুলের মায়ের কথা, বয়স্ক ভাতা নয়, শহীদি মাতা হিসেবে সুবিধা নিয়ে এবং আত্মমর্যাদার সঙ্গে আগামী দিনগুলো কাটাতে চাই।
পোষ্ট/অলক/চাঁপাই
0 comments :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন