কলেজ মাঠের বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা █ যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সংবিধান সংশোধন করেছিল তাদের বিচার হতে হবে


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধান লংঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর দল গঠন করা বিএনপি আজ সংবিধান সংশোধন নিয়ে দেশে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। মার্শাল ল জারি করে সংবিধান সংশোধন করেছিল তাদের বিচার বাংলার মাটিতে সবার আগে হতে
হবে। কেননা তাদের জনগনের কোন ম্যান্ডেট ছিলনা।  কেন তারা সংবিধান লংঘন করেছিল সে জবাব তাদের দিতে হবে। এর বিচার জনগনের উপর ছেড়ে দিলাম। তিনি শনিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, ’৭৫ জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর মার্শাল ল জারি করে অবৈধ পন্থায় জিয়াউর রহমান মতা দখল করেছিল। মার্শাল ল  কোন সাংবিধানিক আইন নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন,  সংবিধান লংঘণ করে ক্ষমতা গ্রহণের পর জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার পর দল গঠন করে। অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা গ্রহণের মধ্যদিয়ে যে দলের সৃষ্টি এখন তারাই বলছে দেশে সংবিধান নেই। কোথায় সংবিধান নেই পাল্টা প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই সংবিধান আছে। তারা সংবিধান দেখেন না। বিএনপি নেত্রী সংবিধান নেই বলে চিল্লাতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জামাত জোট সরকার মতায় থেকে লুটপাট দুর্নীতি করেছে। নিজেরা সম্পদশালী হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা গরীব জনগনের জন্য যে কাজ করতে চেয়েছি তা তারা করেনি। বিএনপি- জামাতের জনগনের উপর কোন দরদ নেই। কেননা আওয়ামীলীগ গরীব মানুষের দ্বোর গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিতে কমিউনিটি কিনিক নির্মাণ করেছিলো। কিন্ত তারা ক্ষমতায় এসে সেগুলোকে বন্ধ করে দেয়। জনগনের প্রতি দরদ থাকলে তারা এটা করতে পারতো না। তারা জন কল্যাণে কাজ না করে অবৈধভাবে টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচারে ব্যস্ত ছিল। তিনি বলেন, মানুষের কল্যানে কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। দেশের মানুষের খাদ্যাভাব দূর করা, শিক্ষা-চিকিৎসা সেবাসহ বাসস্থান নিশ্চিত করার লে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। আওয়ামীলীগ জনগনের কাছ যে ওয়াদা করে তা বাস্তবে রূপ দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগনকে দেয়া প্রতিশ্র“তি একে একে পুরন করে যাচ্ছে সরকার। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। দারিদ্রসীমা ১০ ভাগ নিচে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, শিশু মৃত্যুর হার কমায় বর্তমান সরকার পুরস্কৃত হয়েছে। অথচ বিএনপি জামাত ক্ষমতায় থাকলে দেশ তিরস্কৃত হয়। তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পরেও তার সরকার অধিকদামে চাল কিনে ওএমএস’র মাধ্যমে ২৪ টাকা কেজি দরে জনগনের কাছে বিতরণ করেছি। আমরা জিনিষের দাম কমিয়েছি। তিনি আরো বলেন, ২০০১ সালে আওয়ামী সরকার মতা ছেড়ে যাওয়ার সময় ১০ টাকা কেজি চাল রেখে গিয়েছিল। সে চাল ২০০৮ সালে মতায় আসার সময় ৩৮-৪০ টাকা হয়েছিল। তিনি বলেন, ১০ টাকায় রেখে যাওয়া চাল কেন ৩৮-৪০ টাকা হলো তার জবাব বিএনপি জামাতকে দিতে হবে।  কৃষি ক্ষেত্রে ৬ হাজার কোটি টাকা ভুর্তকি দেয়া হয়েছে। এ সরকার কৃষকের সরকার। অথচ বিএনপি কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দিয়েছে। সারের জন্য কৃষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, তারা সরকার ৩ বার সারের দাম কমিয়েছে। এখন সারের পেছনে কৃষকে দৌড়াতে হয়না। সার দৌড়ায় কৃষকের পেছনে।
জনসভায় নারী উন্নয়ন নীতি বিরোধী দল পানি ঘোলা করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন আওয়ামীলীগ করেনা। আমরা কোন আইন করি নাই। নারী উন্নয়ন ও নারীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নারী উন্নয়ন নীতি করা হয়েছে। বিরোধী দল যাতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারে সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তারা ইসলামের কথা শুধু মুখেই বলে। তারা মুখে ইসলামের কথা বলে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করেছে। ইসালামে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই। যারা জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে তারাই ইসলামের বিপক্ষে কাজ করছে। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগই ইসলামের সঠিক প্রচার ও প্রসারের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন করেছিল।  প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বর্তমান সরকারের গ্রহণ করা বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে বলেন, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে কোন জামানত ছাড়ায় অর্থ ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রযুক্তি বিকাশের জন্য দেশেই ল্যাপটপ তৈরী করা হচ্ছে। ১২ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যেই জনগনের কাছে এই ল্যাপটপ পৌছে দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা পর্যন্ত অবৈতনিক করেছিল। আমরা তা অনুসরণ করে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই সরবরাহ করেছি। বর্তমান সরকারের আমলে প্রচুর সরকারি চাকরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্মরণকালের বিশাল এই জনসভায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক স্বারষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ, জিয়াউর রহমান, শওকত আরা বেগম, জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মইনুদ্দিন মন্ডল, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার মাসুদ, সদর উপাজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এনামূল হক এমপি।
এর আগে তিনি ৩শ ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে  আমনুরায় নেমে ৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টের ভিত্তিপস্তুর স্থাপন, এরপর একই স্থানে রাজশাহী-আমনুরা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর রেলওয়ে পূনবার্সন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন, ২য় মহানন্দা সেতুর ভিত্তিপস্তুর স্থাপন এবং রেহাইচর এলাকায় নির্মিত ডা, মেসবাহুল হক বাচ্চু  ষ্টেডিয়ামের উদ্বোধন করেন। দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রী সার্কিট হাউসে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে  মতবিনিময় করেন।

পোষ্ট/অলক/চাঁপাই

Flag Counter
পাঠকের সবধরনের মত তুলে ধরতে চাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ । যে কোন বিষয় নিয়ে আপনিও লিখুন আর পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে. সাথে আপনার যোগাযোগের ঠিকানা ,আপনার একটি ছবি পাঠাতে ভুলবেন না।আপনার লেখা বা ছবি আমাদের ইমেল করুন chapainawabganjnews@yahoo.com