প্রধানমন্ত্রী আসছেন, তাই চেনা শহরের অচেনা রূপ

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরকে ঘিরে শেষমূর্হুতে সাজ-সাজ রব পড়েছে গোটা শহর জুড়ে। চারদিকই সেজেছে নতুনরূপে। বর্ণিল ব্যানার, ফেস্টুন, পোষ্টার, তোরণে ছেয়ে গেছে শহর এবং শহর ছাড়িয়ে মহাসড়কসহ অন্যান্য সড়কগুলো। সরকারি
অবকাঠামোগুলো রং করাসহ সড়কের ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ আর ঝকঝকে সড়ক, বদলে দিয়েছে শহরের চেহারা। চিরচেনা প্রিয় চাঁপাইনবাগঞ্জের যেন অচেনা রূপ। শনিবার প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ।
২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী এবং ২০০৩ সালে বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসার পর আগামী ২৩ এপ্রিল একদিনের সরকারি সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন তিনি ৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, সেই সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদানের কথা রয়েছে। সরকারি সফর সূচি অনুযায়ী বেলা ১১ টায় তিনি সদর উপজেলার আমনুরায় রাজশাহী-আমনুরা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর রেলওয়ে পূনবার্সন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করবেন। এরপর একই স্থানে তিনি ৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টের  ভিত্তিপস্তুর স্থাপন করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সদর উপজেলার সাহেবের ঘাটে মহানন্দা নদীর উপর ২য় মহানন্দা সেতুর ভিত্তিপস্তুর স্থাপন করবেন। পরে তিনি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সেতু সংলগ্নস্থানে নির্মিত নতুন ষ্টেডিয়ামের উদ্বোধন করবেন। দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রী সার্কিট হাউসে জেলার সার্বিক উন্নয়ন সর্ম্পকে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ের পর বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দিবেন। জনসভায় মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ্ব, জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ্ব বক্তব্য রাখবেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসছেন এমন সম্ভাবনাকে ঘিরে আওয়ামীলীগসহ তার সহযোগী সংগঠনগুলো প্রস্তুতি শুরু করে। সর্বশেষ ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কর্মসুচি চুড়ান্ত হলে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী তৎপর হয়ে উঠে। ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগ নেতাদের তত্বাবধানে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক এমপি, জিয়াউর রহমান এমপি এবং সদর আসনের এমপি আব্দুল ওদুদ, জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মইনুদ্দিন মন্ডল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন প্রস্তুতিগুলো তদারকি করছেন। ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র খাইরুজ্জামান লিটন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রলীগের উদ্যোগে প্রতিদিনই এবং যুবলীগের ব্যানারে শহরে মিছিল হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে মুক্তিযোদ্ধাসহ অটো রিক্্রাচালকদের উদ্যোগে প্রচার মিছিল হয়েছে। জনসভার প্রচার মাইকিং-এর সরগরম হয়ে উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। 
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে সামনে রেখে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ব্যস্থাপনায় শহরের রাস্তাঘাট সংস্কারের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। রাস্তার পাশের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রাকারী সংস্থা গুলো।
প্রধনমন্ত্রীর এই সফরকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী। সবচেয়ে বেশি আনন্দিত জেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষ। কারণ তাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরন হতে চলেছে। দ্বিতীয় মহানন্দা সেতু তাদেরকে এতো দিনের  ‘বিচ্ছিন্ন জনপদ’ এর বাসিন্দার আখ্যা থেকে রক্ষা করবে। পৌর এলাকার সাহেবের ঘাটে সেতুটি নির্মান করা হলে জেলার সঙ্গে চরাঞ্চলের ৭ টি ইউনিয়নের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের সঙ্গে সঙ্গে পূরন হতে চলেছে জেলাবাসীর আরেকটি প্রাণের দাবি রেলপথ সংষ্কার। এই রেলপথ সংস্কারের দাবিতে তারা আন্দোলনও করেছিল। ওইদিন প্রকল্পের উদ্বোধন করে জেলাবাসীর হাতে আন্দোলনের সুফল দিবে প্রধানমন্ত্রী। ৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বহুলাংশে দূর হবে বিদ্যুৎ সমস্যা।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ তাকিয়ে আছে কলেজ মাঠের জনসভার দিকে। এই জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নে কি কি প্রতিশ্র“তি দেন তারদিকে। কারণ অবেহিলত এই জেলার আরো উন্নয়ন প্রয়োজন। তাই উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জেলাবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশি। আর দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এবারই চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩টি সংসদীয় আসনেই বিজয় উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগকে। তিনজন সংসদ সদস্য উপহার দেয়ায় তারা প্রতিদান হিসেবে আরো একটু উন্নয়ন দাবি করতেই পারে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জেলাবাসীর প্রত্যাশা গুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু, পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবারহ, জেলার নদী খনন, মহানন্দায় রাবারড্যাম নির্মাণ করে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করণ, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তর, জেলায় একটি কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠা, সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করণ, নদী ভাঙ্গন কবলিত চরাঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভাকে আধুনিক মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ার লক্ষে আর্থিক অনুদানের ঘোষণা, আম প্রক্রিয়াজাত করণের ব্যাবস্থা করা, নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেয়া, একটি পূর্ণাঙ্গ যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রভৃতি। 
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা তাদের দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রতি দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পোষ্ট/অলক/চাঁপাই

Flag Counter
পাঠকের সবধরনের মত তুলে ধরতে চাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ । যে কোন বিষয় নিয়ে আপনিও লিখুন আর পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে. সাথে আপনার যোগাযোগের ঠিকানা ,আপনার একটি ছবি পাঠাতে ভুলবেন না।আপনার লেখা বা ছবি আমাদের ইমেল করুন chapainawabganjnews@yahoo.com