আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার যুগেও পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটের ফুটপাতে ডেন্টাল কিনিক

প্রতিষ্ঠানিক শিা নেই, চিকিৎসা জ্ঞান সে তো আরো অনেক দূরের বিষয়। তারপরও তারা দন্ত চিকিৎসাক। ফুটপাতেই তাদের চেম্বার বা কিনিক। সম্বল শুধু ছোট একটি টেবিল, চেয়ার আর মাথার ওপরের ছাতা। আর আছে টেবিলের ওপর সাজানো মানুষের উপরে ফেলা দাত, সুঁই, সিরিঞ্জ দাঁতের চিকিৎসার উপকরণ।
বিশেষজ্ঞমহল এসব চিকিৎসককে অবহিত করছেন এক কথায় ‘ভয়ানক’ হিসেবে। আর এসব ভয়ানক চিকিৎসকের ভয়াবহ চিকিৎসা চলছে সবার চোখের সামনে। রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে শনিবার মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপস্থিতি দেখা যায় এসব চিকিৎসকের। কিন্তু ভয়াবহ এ চিকিৎসা পদ্ধতি বন্ধের কেউ নেই। নির্বিকার প্রশাসনযন্ত্র। অথচ বিজ্ঞমহল বলছেন, এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুকি রয়েছে। বানেশ্বর বাজারের এক দাঁতের ডাঃ মোঃ মুকুল হোসেন বলেন, হেপাটাইটিস বি ও সি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আর এসব রোগের সংক্রমন ঘটে ফুটপাতের চিকিৎসা থেকে। তারা একই সিরিঞ্জ, সুঁই ব্যবহার করছেন একাধিক ব্যাক্তির দেহে। নিজেরা ব্যবহার করে না হাত গাভস। যে কারণে একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে সংক্রামিত হচ্ছে রোগগুলো।
তিনি আরো বলেন, এসব জায়গায় চিকিৎসা নেন নিম্ন আয়ের লোকজন। কিন্তু তারা জানেন না চিকিৎসাসেবা নেওয়ার নামে তারা কি নিচ্ছেন। আর যারা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তারাও জানেন না কী তিটা করছেন। তবে ডাঃ মোঃ মুকুল দায়ী করেন উভয়ের অজ্ঞতাকে এবং সরকার বা প্রসাশন যন্ত্রের নির্র্লিপ্ততাকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারের মাড়িয়া রোডে দাঁতের চিকিৎসা প্রথম শুরু করেন নাটোর জেলার পন্ডিত পাড়া গ্রামের এবারত আলী। জীবনের প্রথম দিকে হাট বাজার ও বাসস্টানে ফেরি করতেন দাঁতের মাজন। দাতের মাজন বিক্রয় করতে করতে একদিন হয়ে যায় দাঁতের চিকিৎসক। তিনি দির্ঘ ২০ বছর দাঁতের চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবং সেই সাথে তার ছেলে শহীদ আলীকেও মাজন বিক্রয়য়ের পাশা-পাশি দাঁতের চিকিৎসক হিসেবে  গড়ে তোলেন। পিতার ২০ বছরের অভিজ্ঞতাকে অনুসরণ করে শহীদ আলী বানেশ্বর ও তেবাড়িয়া হাটে চেয়ার টেবিল নিয়ে দাতের চিকিৎসা শুরু করেন। বর্তমানে সে বানেশ্বর হাটের মাড়িয়া রোডে বসেন। বর্তমানে সেখানে দুই জন চিকিৎসক রয়েছেন। প্রত্যেকেই কারো সঙ্গে থেকে কাজ শিখেছেন এবং দন্ত চিকিৎসাকে বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। দাঁত  তুলতে নেন ১০০ টাকা।
বানেশ্বরের মাড়িয়া রোডের ফুটপাতে বসা দাঁতের ডাক্তার শহীদ জানান, দাঁত তোলা ফিলিং, নোকল দাঁত লাগানো, স্কানিক সহসব ধরনের চিকিৎসাই তারা করে থাকেন। তার সঙ্গে কথা বলার সময় উপস্থিত হন বিড়ালদহ এলাকার সালাউদ্দিনের স্ত্রী সালেহা বেগম(৪৫)। তার সমস্যা দাতের ব্যথা। শহীদ তাকে চেয়ারে বসে প্রথমে পুশ করেন ইনজেকশন। তারপর খুচিয়ে খুচিয়ে তুলা দিয়ে পরিষ্কার করেন ফিলিং এর কাজ। বিল ১০০ টাকা পরিশধ করেন সালেহা বেগম নিশ্চিত হতে প্রশ্ন করেন ‘থাকবে তো’।
হাফিজ ডেন্টাল কেয়ার এর ডাঃ হাফিজুর রহমান জানান, ফুটপাতে ফিলিং ও নকল দাত তৈরীতে তারা সাধারণত ব্যবহার করেন সেল্ফ কিউর রেজিন নামের এক ধরনের উপদান যা মূলত এক ধরনের পাষ্কিক আইটেম। সুবিধা হচ্ছে এই উপকরণটি দিয়ে তারা অল্প সময়ে নকল দাঁত তৈরী বা ফিলিং করে দিতে পারছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, দীর্ঘ সময় ধরে মুখে থাকার কারনে এ থেকে ক্যান্সার হওযার সম্ভবনা থাকে। তিনি আরো বলেন এছাড়া তারা ওবেশ করতে ইথঅইল কোরাইড অথাব ফরমাল ডিহাইড নামক কেমিক্যাল ব্যহার করেন, যা মুখের টিস্যুগুলোকে বার্ণ করে দেয়। এর থেকে প্রথমে ঘা হয় এবং পরে সেখানে ক্যান্সার হয়। তবে এর সবকিছুর মুলে রয়েছে অপচিকিৎসা এবং এ অপচিকিৎসা বন্ধের নেই কোন উদ্যেগ। তবে এ অপচিকিৎসা বিস্তারে এ দেশের কালচারকেও দায়ী করেন তিনি। তিনি বরেন, এ দেশের মানুষ যে কোন শারীরিক সমস্যার জন্য মেডিক্যালে যান, চিকিৎসাকদের কাছে যান। দাঁতের ব্যাপারে তারা অনেকটা উদাসীন। এখনো তারা ঝাড়ফুঁক পোকা উঠানোতে বিশ্বাস করেন।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলাতে হাসপাতালে একটি করে ডেন্টাল সার্জানের পদ রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ পদ খালি। কোন কোন পদে চিকিৎসক থাকলেও তারা সেখানে থাকেন না। আর রোগীরাও সেখানে যান না। এর জন্য দরকার জনসচেতনতা।


Flag Counter
পাঠকের সবধরনের মত তুলে ধরতে চাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ । যে কোন বিষয় নিয়ে আপনিও লিখুন আর পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে. সাথে আপনার যোগাযোগের ঠিকানা ,আপনার একটি ছবি পাঠাতে ভুলবেন না।আপনার লেখা বা ছবি আমাদের ইমেল করুন chapainawabganjnews@yahoo.com