মানবতা বিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির কর্মীদের ব্যাপক তা-বলীলা ও পরবর্তী সংহিস ঘটনার প্রেড়্গিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ উপজেলায় গড়ে উঠছে আন্দোলন ও হরতালের নামে সংহিসতা প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রতিরোধ কমিটি। গড়ে উঠা কমিটি গুলোয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ্বে আধিক্য থাকলেও অনত্মঃত তিনটি পয়েণ্টে গঠিত কমিটি হয়েছে এলাকাবাসী ও কৃষকদের নিয়ে। গঠিত কমিটিগুলোকে স্বাগত জানিয়ে প্রশাসনের পড়্গ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। পাশাপশি দুই তিনটি কমিটি বাঁশের লাঠি নিয়েও প্রস'ত রেখেছে যুবকদের।
পুলিশ ও স'ানীয় বিভিন্ন সূত্রগুলো জানিয়েছে, গেল বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর পরই জামায়াত শিবির কর্মীরা হটাৎ ‘জঙ্গি রূপ’ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স'ল বন্দর, কানসাট বাজার, কানসাট পলস্নী বিদ্যুৎ সমিতি, শিবগঞ্জ বাজার, বারোঘরিয়া বাজার, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সেতু টোল পস্নাজা সংলগ্ন সরকারি স'াপনা, শহরের অক্ট্রয় মোড়স' বিআরটিসি বাস ষ্ট্যান্ড, বিশ্বরোড় মোড় থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা পর্যনত্ম গণ পরিবহনে ব্যাপক ভাঙ্গচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করে। পরের দিন শুক্রবারও বিভিন্নস'ানে ভাঙ্গচুর ও হামলা ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ভয়াবহ ড়্গতি সাধিত হয় কানসাট পলস্নী বিদ্যুৎ সমিতিতে এবং শহরের ৪টি বিআরটিসি বাসসহ প্রায় অর্ধ শত বাস ও অন্যান্য গণপরিবহনের। ওই দিন কানসাট পলস্নী বিদ্যুৎ সমিতিতে দফায় দফায় হামলা, অগ্নি সংযোগ ও লুটপাটে সমিতিরই ড়্গতি হয়েছে প্রায় ২ শ কোটি টাকা। লুটপাট হয়েছে সমিতির ৫ টি কোয়াটারের ৪৮ টি ফ্লাটের প্রায় ৭০ পরিবারের ব্যাপক সম্পদ। পলস্নী বিদ্যুৎ সমিতিতে চালানো ব্যাপক তা-বলীলা জন সম্মুখে চলে আসলে এবং বিদ্যুতের উপ-কেন্দ্র আগুনে পুড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ মুখোর হয়ে উঠে।
কানসাটের সামাজিক সংগঠক কাজি এমদাদুল হক জানান, পলস্নী বিদ্যুৎ সমিতির বাইরে তার বাড়িসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙ্গচুর, লুটপাট হলে শনিবার প্রথম প্রতিবাদ হয় কানসাটের গোপাল নগর মোড়ে। কানসাট বাজারের ডিম ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির উদ্যোগি হয়ে ব্যবসায়ীদের সংগবদ্ধ করে গোপালনগর মোড়ে প্রতিরোধ সভা করে। এতে ব্যবসায়ীরা সর্বসম্মতভাবে মনিরম্নল ইসলামকে সভাপতি ও আবু সুফিয়ানকে সাধারণ সম্পাদক করে আন্দোলন ও হরতালের নামে সংহিসতা প্রতিরোধে ‘ঐক্য কমিটি’ গঠন করা হয়। এ কমিটি গঠনের পর পরই কানসাট বাজারেও অনুরূপ কমিটি গঠন হয়। যাতে সভাপতি করা হয় প্রবদ দত্তকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় সেলিম উদ্দীনকে। স'ানীয়রা জানায়, কানসাটে দু’টি কমিটি গঠনের পর রাতে কানসাট পুকুরিয়ায় সব শ্রেণীর মানুষকে নিয়ে সভা ডাকেন কানসাট পলস্নী বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা গোলাম রাব্বানী। বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা গোলাম রাব্বানীর ভাই আবু বক্কর সিদ্দীকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ইউপি চেয়ারম্যান বেনাউল ইসলামসহ সব রাজনৈতিক দলের স'ানীয় নেতারা অংশ নেয়। সভা সূত্র জানিয়েছে, ওই সভায় ‘ রাজনৈতিক কর্মসুচি যাই হোক না কেন, কোন পড়্গই স'ানীয় কারো শানিত্ম বিনষ্ট করবেনা মর্মে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করে’।
এদিকে, কানসাট পলস্নী বিদ্যুৎ সমিতি’র উপ-কেন্দ্র আগুনে পুড়ে শিবগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী ৩ টি উপজেলার প্রায় ২০ টি ইউনিয়নে অন্ধকারে নিম্মজিত হওয়ায় এবং প্রতিমূহুর্তে সহিংসতার আত্মংক বিরাজ করায় শিবগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় শুরম্ন হয় প্রতিরোধের ‘প্রতিরোধ ঐক্য কমিটি’। শিবগঞ্জের ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নে অধ্যাপক আব্দুস সালামের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠিত প্রতিরোধ সভায় ড. আশরাফ আলীকে আহবায়ক করে একটি ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ্ব ওই সভায় উপসি'ত থাকলেও বিএনপি’র স'ানীয় শীর্ষ নেতারা উপসি'ত ছিলেন না। তবে, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন নয়ালাভাঙ্গায় চিত্র ভিন্ন। সোমাবার রাতে রানীহাটি পাঠাগার মিলনায়তনে রানীহাটি বাজার কমিটি’র উদ্যোগে আয়োজিত সভায় ব্যাবসায়ীদের পাশাপাশি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এডু, বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী এমনকি ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর আব্দুর রহিম উপসি'ত ছিলেন। বাজার কমিটি’র সভাপতি তসলিম উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বক্তব্য রাখেন কমিটি সাধারণ সম্পাদক নুরম্নল হক।
শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নে সোমবার বিকেলে ‘জামায়াত শিবিরের সংহিসতা ও তা-ব’র এর প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা তোহুর আহম্মেদ বলেন, ‘ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হলেও স'ানীয় জনসাধারণের সম্পৃক্ততা ছিল। সবাই আমরা পলস্নী বিদ্যুতে হামলাকারীদের বিচার দাবি করেছি এবং কোন ধরনে সংহিসতা হলে তা প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গিকার করেছি’। এদিকে, টানা ৬ দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় বোরো আবাদ নিয়ে বিপাকে পরা কৃষকরাও সংগঠিত হয়েছে। বিনোদপুর, মনাকষা, দুর্লোভপুর ইউনিয়নের হাজার হাজার কৃষক এখন সংগঠিত। এই কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অধ্যাপক সাদেকুল ইসলাম পুটু বলেন, ‘কানসাট পলস্নী বিদ্যুৎ অফিসে আগুন দেয়ায় কৃষকদের মারাত্মক ড়্গতির মুখে পড়তে হয়েছে। এ ঘটনায় ঐক্যবদ্ধ কৃষকরা আজ ( বুধবার) কৃষক সমাবেশ করবে’।
সাম্প্রতিক সংহিসতার প্রেড়্গাপটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়ার সব দলের ব্যবসায়ীদের সমন্বয়েও গঠিত সংহিসতা প্রতিরোধ কমিটিরও সভা হয়েছে সোমবার বিকেলে। ব্যবসায়ী শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, বখতিয়ার হোসেন, আলহাজ্ব আল আমীন, সফিকুল ইসলাম, লতিফুল রহমান, মজিবুর রহমান প্রমুখ। সভায় হরতালের নামের সংহিসতা প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করার উপর গুরম্নত্ব আরোপ করা হয় এবং বাজারের ব্যাবসায়ীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে তাদের ব্যাবসায়ীক কর্মকা- পরিচালনা করতে পারে সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করা হয়। ব্যবসায়ী নেতা শামসুল আলম বলেন, ‘ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার জামায়াত শিবির কর্মীরা বারোঘরিয়া বাজারে হামলা চালিয়ে ২৮ টি বৈদ্যুতিক মিটারসহ ২টি দোকান ভাঙ্গচুর করলে ওই দিন রাতেই বাজারে সংহিসতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়’। স'ানীয় সূত্র ও কমিটি’র নেতৃবৃন্দ্বের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গঠিত কমিটিগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কমিটি বাঁশের লাঠি তৈরী করে সংহিসতা প্রতিরোধে যুবকদের প্রস'ত রেখেছেন। এর মধ্যে শিবগঞ্জ পৌর এলাকার নতুন আলীডাঙ্গা সার্বজনীন পূজা মন্ডপের প্রতিমা কাঠামোয় আগুন দেয়ার পর স'ানীয় হিন্দু মুসলমান সম্মিলিতভাবে বাঁশের লাঠি নিয়ে অন্যান্য মন্দির ও এলাকা পাহারার উদ্যোগে নিয়েছে।
জেলার দুই উপজেলার এই উদ্যোগে সব দলীয় মতাদর্শের ব্যাবসায়ী নেতারদের অধিক্য থাকলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ্বের সম্পৃক্ততা চোখে পড়ার মত। ব্যবসায়ী ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ্বের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে প্রশাসনও। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এজেডএম শারজিল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ বণিক সমিতি ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ্ব এ ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে শুনেছি। শানিত্মপূর্ণভাবে ব্যবসা বাণিজ্য করতে গিয়ে তারা যদি সংহিসতার মুখে পড়ে প্রতিরোধের উদ্যোগে নেয় প্রশাসন অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করবে’।