আসামী ধরতে গিয়ে শ্যামপুরে জামায়াত পুলিশ সংঘর্ষ > নিহত ৩ (বিস্তারিত)


চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নে আসামী ধরতে যাওয়া পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে। এতে ২০জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। শ্যামপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২৫ জনকে। এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরেরও জামায়াত শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। উদ্ভুত পরিসি'তিতে সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে জেলার সব ক’টি রম্নটের যান চলাচল। অন্যদিকে, জেলা জামায়াতের আমীর নিহতদের নিজেদের কর্মী দাবি করলেও ১৮ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দ্ব নিহতের ‘নিরীহ জনগন’ উলেস্নখ করে হত্যাকা-ের প্রতিবাদে আগামী রোববার জেলায় সকাল সন্ধ্যা হরতাল আহবান করেছে। পুলিশের জামায়াতের সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় থমথমে অবস'া বিরাজ করছে।
পুলিশ ও স'ানীয় সূত্রগুলো জানায়, মানববতা বিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর পরই কানসাট পলস্নী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নি সংযোগসহ বিভিন্ন মামলার আসামী গ্রেফতার করতে রাত ৩টি দিকে পুলিশ শ্যামপুরের গোপালনগরে যায়। এ সময় জামায়াত শিবিরের কর্মীরা এলাকায় ডাকাত পড়েছে উলেস্নখ করে এবং পটকা ফুটিয়ে আশেপাশের ৩ টি গ্রামের কর্মীদের জড়ো করে পুলিশ সদস্যদের অবরম্নদ্ধ করে। ওই সূত্র জানায়, ঘিরে ফেলা পুলিশ সদস্যদের উপর একটি আম বাগান থেকে হামলাও করা হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর একটি দল ঘটনাস'লে পৌছলে জামায়াত শিবিরের কর্মীরা গ্রামবাসীদের নিয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস'লেই নিহত হয়, শ্যামপুরের ওমরপুর গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে ওলিউলস্নাহ ( ১৮) ও বাবুপুর গ্রামের মোহাম্মদ বদর আলীর ছেলে রবিউল ইসলাম (২৫)। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত গোপালনগর গ্রামের জিলস্নুর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান (৪৫) হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়।
স'ানীয় সূত্রগুলো জানাচ্ছে, প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপি চলা এই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে প্রায় ২ জন। এ ছাড়া পুলিশসহ আহত হয়েছে অনত্মত ৫০ জন ব্যক্তি। আহতদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও স'ানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
গোপালনগরের ইসমাইল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ গ্রামে ঢুকেই বৃষ্টির মত গুলি চালাতে থাকে। তারা নির্বিচারের গুলি চালিয়েছে। মানুষজন আত্মংকিত হয়ে একদিক সেদিক পালিয়ে যায়। তখনই পুলিশ গুলি করে মানুষজনকে আহত ও নিহত করেছে’।
এদিকে, জামায়াত শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ৩ জনকে নিজেদের কর্মী দাবি করেছে জামায়াত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর নজরম্নল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ নিহত ওলিউলস্নাহ শিবির কর্মী এবং অপর দুই জন জামায়াতের কর্মী। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ ঘুমনত্ম জনগনের উপর গুলি চালিয়ে হত্যাকা- ঘটিয়েছে’। তবে, এ ঘটনায় ডাকা ১৮ দলের সাংবাদিক সম্মেলনে নিহতদের কোন দলীয় পরিচয় উলেস্নখ করা হয়নি। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হারম্ননুর রশিদ, জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর রফিকুল ইসলাম, সাবেক এমপি নায়েবে আমীর লতিফুর রহমানের উপসি'তিতে সাংবাদিক সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে জেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া নিহতদের ‘নিরীহ জনগন’ উলেস্নখ করে আগামী রোববার জেলায় সকাল সন্ধ্যা হরতাল কর্মসুচি ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে জামায়াতের পড়্গ থেকে নিহতদের নিজেদের কর্মী দাবি করা হলেও অনত্মত দুজনের পরিবার থেকে জানানো হয়েছে তাদের কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিলনা। শ্যামপুরে জামায়াত পুলিশ সংঘর্ষের খবর আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিড়্গুব্ধ জামায়াত শিবির কর্মীরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের কানসাট থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের সিসিডিবি মোড় পর্যনত্ম প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পথের বিভিন্ন স'ানে বিদ্যুতের পোল, কাঠের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। কার্যতঃ দুপুর পর্যনত্ম শিবগঞ্জের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে জামায়াত শিবির কর্মীরা বিড়্গোভ মিছিল বের করে শহরের শিবতলা ও বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সেতু এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে বিড়্গোভ করলে ওই ব্যারিকেড সরাতে যাওয়া পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় শিবির কর্মীরা পুলিশকে লড়্গ্য করে ককটেল নিড়্গেপ করলে পুলিশও তাদের উদ্যেশ্যে বেশ কয়েক রাউ- রাবার বুলেট ও টিয়ার সেল নিড়্গেপ করে।
মহাসড়কের পথে পথে ব্যরিকেড ও ককটেল বিষ্ফোরণের ঘটনায় আত্মংক ছড়িয়ে পড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ এলাকায়। সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সকল রম্নটের বাস চলাচলা।
জামায়াত পুলিশের সংঘর্ষে শত শত রাউন্ড গুলি বর্ষণ করা হয়েছে বলে স'ানীয়রা জানালেও এর সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি। সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার বশির আহম্মেদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারাও কথা বলতে রাজি হননি।
গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ৩ জনের লাশ ময়না তদনেত্মর জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। শ্যামপুর এলাকায় থমথমে অবস'া বিরাজ করছে।
Flag Counter
পাঠকের সবধরনের মত তুলে ধরতে চাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ । যে কোন বিষয় নিয়ে আপনিও লিখুন আর পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে. সাথে আপনার যোগাযোগের ঠিকানা ,আপনার একটি ছবি পাঠাতে ভুলবেন না।আপনার লেখা বা ছবি আমাদের ইমেল করুন chapainawabganjnews@yahoo.com