কানসাট পৌরসভা নিয়ে নতুন ইস্যু @ অন্তরালে ভাইয়ের প্রার্থী হতে না পারা আর ক্ষমতাসীনদের প্রশাসক হওয়াসহ নিয়োগ বাণিজ্যের স্বপ্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিদ্যুৎ আন্দোলনের জন্য বহু আলোচিত কানসাট নতুন পৌরসভা গঠন ইস্যুতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পৌরসভা গঠনের বিরোধীতায় নতুন মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে পল্লী বিদ্যুৎউন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ ও তার নেতা গোলাম
রাব্বানী। পৌরসভা গঠনের উদ্যোগকে ‘অসৎ উদ্দেশ্য’ আখ্যা দিয়ে গোলাম রাব্বানী বলছেন, পৌরসভা করা হলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। অন্যদিকে, পৌরসভা বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে জোরেশোরে তৎপরতা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ তার সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতারা। পাল্টাপাল্টি তৎপরতায় সৃষ্ট উত্তেজনায় আবারও আন্দোলন-সংঘাতের শংকা করা হচ্ছে। পাল্টাপাল্টি অবস্থানের পেছনে একদিকে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে গোলাম রাব্বানীর নিজ ভায়ের প্রার্থী হতে না পারা এবং অন্যদিকে নতুন পৌরসভায় প্রশাসক হওয়ার সুযোগসহ নিয়োগ বাণিজ্য কাজ করছে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা।
সূত্র জানিয়েছে, সরকার স¤প্রতি শিবগঞ্জের কানসাট ইউনিয়নকে পৌরসভায় রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সে লে গত সপ্তাহে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রশাসনকে  ‘কানসাটকে পৌরসভায় রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে’ উল্লেখ করে পত্র দিয়ে ইউপি নির্বাচনের তফসীল ঘোষণায় কানসাটকে বাদ রেখে তফসীল ঘোষণা করতে বলে। বিষয়টি কানসাট এলাাকায় ছড়িয়ে পড়লে নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীর কাতারে থেকে প্রচার প্রচারণায় থাকা লোকজন ‘হোচট’ খায়। শুরু হয় পক্ষে বিপক্ষে নানামূখি তৎপরতা। পৌরসভার পক্ষে থাকা পক্ষ বলছে, পৌরসভা গঠন হলে অবহেলিত কানসাটের উন্নয়ন হবে। আর বিপক্ষে থাকারা বলছে এতে সাধারণ মানুষের কোন কল্যাণ নেই। শুধুই করের বোঝা বাড়বে। এরিমাঝে বিপক্ষের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন বিগত বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে কানসাটের নজিরবিহীন আন্দোলনের নেতা গোলাম রাব্বানী। স¤প্রতি এলাকায় ব্যাপক প্রচার প্রচরণা চালিয়ে বুধবার বিকেলে কানসাটের আব্বাস বাজার আম বাগানে আয়োজন করা হয় জনসভার। জনসভার ব্যানারে ‘কানসাটবাসী’র কথা উল্লেখ থাকলেও জনসভার আয়োজকের প্রচার প্রচারণায় ছিল ‘পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ’ এর কথা। স্থানীয়  আলহাজ্ব বকুল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে গোলাম রাব্বানী অভিযোগ করেন, সম্পূর্ন অসৎ উদ্দেশ্যে মতাশীন আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতা কানসাটকে পৌরসভায় রুপান্তিত করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন পৌরসভা গঠনের জন্য যে নীতিমালা অনুসরন করা হয় তাতে কানসাট পড়েনা। নুণ্যতম ৫০ হাজার লোকের বসবাস এবং ৮০ ভাগ জমি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার হলে সে এলাকায়  পৌরসভা গঠন করা যেতে পারে। অথচ ২০১১ সালের আদম শুমারীর হিসেবে অনুযায়ী কানসাটের জনসংখ্যা ৪০ হাজার ৩৩৬। আর এখানকার ৮০ ভাগ জমিই কৃষি কাজে ব্যবহার হয়। কানসাট পৌরসভা হলে সাধারণ মানুষের কল্যাণ হবে না। অতিরিক্ত করারোপের মাধ্যমে এখানকার সাধারণ মানুষের দুদর্শা আরো বাড়বে। কাজেই কানসাটের মানুষ পৌরসভা চায়না। তিনি বিগত কানসাট আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে সরকারকে উদ্দেশ্যে জনমত উপো করে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিবেননা। আমরা কোন অনায্য সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত নই। পৌরসভা গঠনের প্রক্রিয়া বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন কমসূচি ঘোষণা করা হবে। জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় আব্দুল আজিজ, আব্দুল বাশির প্রমুখ।
এদিকে, পাল্টা বক্তব্য নিয়ে মাঠে নেমেছে পৌরসভা বাস্তবায়ন কমিটি। কমিটি পক্ষে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি কাজী এমদাদ বলেন কানসাট ইউনিয়ন পৌরসভায় রুপান্তর হবে-এটা এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা। দেশের সবচেয়ে আমবাজার কানসাটে হওয়ায় এর বানিজ্যিক গুরুত্ব রয়েছে। তাই এলাকার উন্নয়নেই পৌরসভা দরকার। অথচ একটি মহল অযথায় এর বিরোধিতা করছে। কানসাটের সাধারন মানুষ এদের সঙ্গে নেই।
অন্যদিকে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, পৌরসভা গঠনকে নিয়ে বঞ্ছিত ও প্রত্যাশার বেড়াজালে আবারও কানসাটকে উত্তপ্ত করা হচ্ছে। পৌরসভা বাস্তবায়নের বিপক্ষে থাকা আন্দোলনের নেতা গোলাম রাব্বানীর আপন ভাই কানসাট ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সে লে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করে আসছিলেন। গোলাম রাব্বানীর ভাই বেনাউল ইসলাম স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রাথীর পে কাজ করতে পারেননি ওই নির্বাচনে গোলাম রাব্বানী প্রার্থী থাকার কারণে। জাতীয় নির্বাচনের পর সংগঠনের ভেতরে বহুলাংশে নিস্কৃয় বেনাউল ইসলাম চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বেশ প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন। স¤প্রতি আব্বাস বাজার গার্লস স্কুলে স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক সভায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে বেনাউলের নামই প্রস্তাব হয়েছে। তবে তা অনুমোদন হয়নি। শেষ মূহুর্তে নির্বাচনী তফসীল বেনাউলের প্রার্থী হওয়ায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয়রা বলছেন, নিজ ভাইয়ের প্রার্থী হতে না পারায় গোলাম রাব্বানী পৌরসভার বিপক্ষে আন্দোলনে নামছেন। তবে, সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ্ব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, কানসাটের ৮০ ভাগই লোকজনই দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। পৌরসভা হলে ১০ টার বাড়ীর খাজনা (ট্যাক্স) ১৫০ টাকা হবে। সুযোগসুবিধা প্রাপ্তির চেয়ে দুর্ভোগই বাড়বে। শুধু সুবিধা হবে ক্ষমতাসীন দলের বেশ কিছু নেতার। ইতোমধ্যে প্রশাসক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়েছেন অনেকে। আর নতুন পৌরসভা হলে নতুন জনবল নিয়োগ হবে তা থেকে ‘নিয়োগ বাণিজ্যের’ মধ্যমে গরীব মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিবে তারা।ওই সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে পছন্দের লোক খোজা।
 গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘ইউপি নির্বাচনের ঘোষিত তফসীলে কানসাটকে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। তা না হলে কানসাটের মানুষকে নিয়ে আন্দোলনসহ আইনী লড়াই চালিয়ে যাবো’। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, পৌরসভা বস্তাবয়নের গঠিত কমিটির সিংহভাগই হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ্ব। কমিটির নেতা কাজি এমমদাদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামূল হকের ভাই শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমূল হকের ঘনিষ্ট।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এজেডএম শারজিল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ইউপি নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা প্রক্রিয়ার পর থেকেই প-বিপ গ্র“প সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভা গঠন নিয়ে জনমত জাচায়ের কাজ চলছে। জাচায় করা জনমতের প্রতিবেদন আমরা শীগরই মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিবো।
পোষ্ট/অলক/চাঁপাই
Flag Counter
পাঠকের সবধরনের মত তুলে ধরতে চাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ । যে কোন বিষয় নিয়ে আপনিও লিখুন আর পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে. সাথে আপনার যোগাযোগের ঠিকানা ,আপনার একটি ছবি পাঠাতে ভুলবেন না।আপনার লেখা বা ছবি আমাদের ইমেল করুন chapainawabganjnews@yahoo.com