█ পদন্নতি না দেয়ার নামে হামলা হলেও অন্তরালে রয়েছে ৫ লাখ টাকার বয়েকা ট্যাক্স █
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আবারও অস্থিতিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট
লিংক লিমিটেডে সোমবার সন্ধ্যায় হামলা ও ব্যাপক ভাঙ্গচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের মূল গেট অবরুদ্ধ থাকায় দুপুর পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি পানামায়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ উভয় পরে সমঝোতায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ‘বিধিমোতাবেক পদন্নতি না দেয়া’র অভিযোগে এনে পানামা কর্মচারীদের নামে এ হামলা চালানো হলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পানামা’র বকেয়া প্রায় ৫ লাখ টাকা আদায় করতে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, পানামা কর্তৃপ তাদের কোম্পানীতে ডেপুটি ম্যানেজারসহ ম্যানেজার সিকিউরিটি পদে ৩ জনকে পদন্নতি প্রদান করে। এতে ুব্ধ হয়ে উঠে পানামা’র পুরাতন কর্মচারীরা। সোমবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে ২০/২২ জন কর্মচারীসহ বহিরাগত লোকজন দলবেধে পানামা অফিসে গিয়ে হামলা করে বসে। এ সময় তারা অফিসের দরজা জানালার কাঁচ, টেবিল আসবাবপত্র ভাঙ্গচুর করে। বন্দর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার রাতে ঘটনার জের ধরে গতকাল মঙ্গলবারও কর্মচারীসহ স্থানীয়রা পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে রাখে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পানামা’র স্বাভাবিক কার্যক্রম। তবে, ভারত থেকে পণ্য আমদানী কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। শুধু আমাদানীকৃত পণ্য পানামা ইয়ার্ডে ঢুকতে পারেনি। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জটিলতা নিরসর ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এজেডএম শারজিল হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার সাকিলুজ্জামান, শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মির্জা আব্দুস সালাম বন্দরে গিয়ে উভয় পরে সঙ্গে সমঝোতায় বসেন। পানামার দেয়া পদন্নতি বন্ধ রাখাসহ বকেয়া টাকা পরিশোধের ব্যাপারে সমঝোতা হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
এদিকে বন্দর সূত্র জানিয়েছে, বন্দরের একটি প্রভাবশালী চক্র প্রায়শই বন্দরের কর্মচারীদের ব্যবহার করে বন্দরে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানিয়েছেন, পদন্নতির দাবিতে হামলা হলেও অন্তরালে রয়েছে বন্দরের সিএণ্ডএফ এজেন্টের প্রায় ৫ লাখ টাকা বকেয়া থাকা। সিএণ্ডএফ এজেণ্ট আখেরুল ইসলাম ধনি পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড কর্তৃপকে ৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা পরিশোধ না করে পরে পরিশোধ করা হবে মর্মে তার পণ্য খালাসের এক্সিট পাশ নেয়। বকেয়া এই টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে কদিন ধরে পানামায় জটিলতা চলে আসছিল।
পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার মামুন আলী জানায়, ‘স্থানীয় ধনি কয়েকদিন পূর্বে পরে ট্যাক্সের টাকা পরিশোধ করার কথা বলে ৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা ট্যাক্স বাকি রাখে। এই টাকা চাইতে গেলে ধনি, ইসমাইল, ওসমান গনি, সোহেল রানাসহ গুণ্ডা বাহিনীর বহিরাগত প্রায় ২০-২৫ জনের একটি দল দেশী ধারালো অস্ত্র ও লাঠি-সোঠা নিয়ে অফিসে হামলা চালায়। হামলা কালে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়’। সোনামসজিদ স্থল বন্দরের শ্রমিক সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ জানান, পানামা কর্মকর্তার দের বিধি বর্হিভুত দায়িত্ব পালনের জন্য এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কোন সিএণ্ডএফ এজেন্টকে ১০ টাকায় বাকি রাখা হয়না। আবার কারো কাছে ৫ লাখ টাকা বাকি রেখে তার পণ্য খালাসের সুযোগ দেয়া হয়। বন্দর সূত্র বলছে, পানামার সহকারী সিনিয়র ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন সাগর ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করে টাকা না বুঝে পেয়েও পণ্য খালাসের সুযোগ দিচ্ছে। অথচ টেজারী চালানের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে পণ্য খালাসের নিময় থাকলেও এখানে সেটা অনুসরণ করা হয়না। পানামা পোট লিংক লিমিটেডের ভেতরে ব্যাংকের কোন বুথ না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
সোনামসজিদ স্থল বন্দর সিএণ্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরিফুল ইসলাম স্বাধীন জানান, ট্যাক্স বাকি রাখার কোন নিয়ম না থাকলেও ব্যবসায়ীক লেনদেনের খাতিরে ব্যক্তিগতভাবে অনেক সময় ট্যাক্স বাকি থাকে। ব্যক্তিগত সখ্যতা করে বাকীতে মাল খালাসের পর টাকা না দেয়ার ঘটনায় মূল। তবে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পদন্নতির জটিলতা। কর্মচারীদের ব্যবহার করেই অস্থিতিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
শিবগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ মির্জা আব্দুস সালাম জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
0 comments :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন