স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামীলীগের উদাসিনতা

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ ১০ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার। বাঙালির জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য ঐতিহাসিক দিন হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামীলীগের কোন ধরনের কর্মসূচী ছিল না আজ । ক্ষমতাসীন দলের কিংবা  সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ স্বেচ্ছাসেবকলীগ কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনুষ্ঠান আয়োজনে কিছুটা সরব ছাত্রলীগও দিবসটি পালনের কথা ভুলে গেছে।
উল্লেখ্য ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকি¯Íানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে লন্ডন পৌঁছেন। এর দুদিন পর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ব্রিটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে নয়াদিলিøর পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছেন। ওইদিনই ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে তার স্বপ্নের স্বদেশ ভ‚মিতে ফিরে আসেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকি¯Íানি হানাদার সামরিক জান্তা শান্তিপ্রিয় নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর কাপুরুষোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু পাকি¯Íানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক গেপ্তারের পূর্বমুহূর্তে আনুষ্ঠানিকভাবে পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি সর্ব¯Íরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার আহŸান জানান। বঙ্গবন্ধুর আহŸানে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র সংগ্রামে।
স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকি¯Íানের দখলদার সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকি¯Íানের কারাগারে আটক রাখে। পাকি¯Íানি শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশা সম্পর্কে তিনি পূর্বাহ্নেই ধারণা করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি অন্য সকল নেতাকর্মীদের আত্মগোপনে গিয়ে, দেশত্যাগ করে হলেও স্বাধীনতা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু নিজে এরকম কোনো পথ গ্রহণ করেননি। কেননা, সেটা তাঁর মতো হিমালয়সম ব্যক্তিত্বের পে বেমানান ছিল। একটি দেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার আত্মগোপন করা তাঁর কাছে শ্রেয় মনে হয়নি। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু বহুবার বলেছেন, পাকি¯Íান সরকারের কাছে তিনিই বড় শত্রæ। তাঁকে না পেলে তারা আরো ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠতো। সেটা তিনি ঘটতে দিতে চাননি। বরং তিনি সর্বোচ্চ ঝুঁকি নেয়ার পথকেই বেছে নিয়েছিলেন।
পাকি¯Íানের কারাগারে গোপন বিচারের মাধ্যমে তাঁর ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছিল এবং কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠের সম্মুখেই তাঁর জন্য কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন দৃঢ় অবিচল। এই অবিচলতার মূলে ছিল বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। মুক্তিকামী বাঙালির সকল আবেগ উচ্ছ¡াসকে নিজের হৃদয়পটে ঠাঁই দিয়ে তিনি ছিলেন এক আপোসহীন ল্েয স্থির মুক্তির দিশারী। বাঙালি জাতির প্রতি বঙ্গবন্ধুর সীমাহীন আস্থা এবং তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বঙ্গবন্ধুকে সর্বদাই রেখেছে দৃঢ়চিত্ত, উন্নতশির, অসীম সাহসী ও জনবৎসল।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকি¯Íানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে লন্ডনে পৌঁছে সাংবাদিকদের কাছে বিবৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘পাকি¯Íানি কর্তৃপ আমার বিরুদ্ধে বিচারের নামে এক প্রহসন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শুনানি অর্ধেক সমাপ্ত হওয়ার পর পাক কর্তৃপ আমার প সমর্থনের জন্য একজন আইনজীবী নিয়োগ করে। আমি কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে দেশদ্রোহীর কলঙ্ক নিয়ে মৃত্যুদÐের জন্য অপো করছিলাম। কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর, আমার বিচারের জন্য যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল তার রায় কখনো প্রকাশ করা হবে না। পাকি¯Íানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বিচারের নামে প্রহসন অনুষ্ঠান করে আমাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানোর ফন্দি এঁটেছিলেন।’
বঙ্গবন্ধু আরো বলেছিলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণের মতো এতো উচ্চমূল্য, এতো ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় জীবন ও দুর্ভোগ আর কোনো মানুষকে ভোগ করতে হয়নি। বাংলাদেশে নির্মম হত্যাকাÐ ঘটানোর জন্য পাকি¯Íানি শাসকগোষ্ঠী দায়ী। হিটলার যদি আজ বেঁচে থাকতো, বাংলাদেশের হত্যাকাÐে সেও লজ্জা পেতো। আমি আর এক মুহূর্তও এখানে থাকতে রাজি নই। আমি আমার জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ব্রিটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে নয়াদিলিøর পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছে ভারতের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শ্রী ভিভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাাতের পর ভাষণে বলেছিলেন, এ অভিযাত্রা অন্ধকার থেকে আলোয়, বন্দীদশা থেকে স্বাধীনতায়, নিরাশা থেকে আশায় অভিযাত্রা। অবশেষে আমি ৯ মাস পর আমার স্বপ্নের দেশ সোনার বাংলায় ফিরে যাচ্ছি। এ ৯ মাসে আমার দেশের মানুষ শতাব্দীর পথ পাড়ি দিয়েছে। আমাকে যখন আমার মানুষদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল, তখন তারা কেঁদেছিল; আমাকে যখন বন্দী করে রাখা হয়েছিল, তখন তারা যুদ্ধ করেছিল আর আজ যখন আমি তাদের কাছে ফিরে যাচ্ছি, তখন তারা বিজয়ী। আমি ফিরে যাচ্ছি তাদের নিযুত বিজয়ী হাসির রৌদ্রকরে। আমাদের বিজয়কে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার যে বিরাট কাজ এখন আমাদের সামনে তাতে যোগ দেয়ার জন্য আমি ফিরে যাচ্ছি আমার মানুষের কাছে।
তিনি আরো বলেন, আমি ফিরে যাচ্ছিÑ আমার হৃদয়ে কারো জন্য কোনো বিদ্বেষ নিয়ে নয় বরং এ পরিতৃপ্তি নিয়ে যে অবশেষে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের, অপ্রকৃতিস্থতার বিরুদ্ধে প্রকৃতিস্থতার, ভীরুতার বিরুদ্ধে সাহসিকতার, অবিচারের বিরুদ্ধে সুবিচারের এবং অশুভর বিরুদ্ধে শুভর বিজয় হয়েছে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন স্বদেশ ভূমিতে ফিরে এসে তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেছিলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, যারা বর্বর বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন, তাদের আত্মার প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। লাখ মানুষের প্রাণদানের পর আজ আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজ আমার জীবনের সাধ পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার প্রতি জানাই সালাম। তোমারা আমার সালাম নাও। আমার বাংলায় আজ এক বিরাট ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। ৩০ লাখ লোক মারা গেছে। আপনারাই জীবন দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে। খেয়ে পরে সুখে থাকবে, এটাই ছিল আমার সাধনা।
বঙ্গবন্ধু বলেন, ইয়াহিয়া খান আমার ফাঁসির হুকুম দিয়েছিলেন। আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান। বাঙালিরা একবারই মরতে জানে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম, আমি তাদের কাছে নতি স্বীকার করবো না। ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময় আমি বলবো, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। তাদের আরো বলেছি তোমরা মারলে তি নেই। কিন্তু আমার লাশ বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিও।
৩০ লাখ মানুষের আত্মাহুতি, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং ৯ মাসব্যাপী রক্তয়ী সশস্ত্র বীরত্বপূর্ণ মরণপণ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীকে পরা¯Í করে বাঙালি জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে সগৌরবে ঠাঁই করে নেয় বিজয়ী বাঙালি জাতি, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আজীবনের স্বপ্নসাধ প্রিয় মাতৃভ‚মিতে ফিরে এসে শুরু করেন যুদ্ধ-বিধ্ব¯Í দেশের পুনর্গঠনের দুরূহ কর্মযজ্ঞ। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের ত মুছে বাংলাদেশকে উন্নয়ন অভিযাত্রায় শামিল করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাঙালি জাতির। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের মিলিত ষড়যন্ত্রে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। অবৈধ মতা দখলদার স্বৈরশাসকরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অর্জনসমূহকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়। বাঙালি জাতিসত্তার আত্মপরিচয়ের মীমাংসিত প্রশ্নকে অমীমাংসিত করে তুলে। বঙ্গবন্ধুর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ নিষিদ্ধ হয়। সর্বগ্রাসী ইতিহাস বিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, জাতির জনকের অবদান এবং আওয়ামী লীগের ভ‚মিকাকে মুছে দিতে চায়। গণতন্ত্র, ভোট ও ভাতের অধিকার হয় অপহৃত। দেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা পড়ে মুখ থুবড়ে। কায়েম হয় এক অন্ধকারের রাজত্ব। কিন্তু দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ শত সংগ্রামে পরীতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই অবস্থাকে মেনে নেয়নি। জেল-জুলুম, নির্যাতন উপো করে এবং অকাতর আত্মদানের মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান করতে সম হয়েছে।
Flag Counter
পাঠকের সবধরনের মত তুলে ধরতে চাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ । যে কোন বিষয় নিয়ে আপনিও লিখুন আর পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে. সাথে আপনার যোগাযোগের ঠিকানা ,আপনার একটি ছবি পাঠাতে ভুলবেন না।আপনার লেখা বা ছবি আমাদের ইমেল করুন chapainawabganjnews@yahoo.com