চাঁপাইনবাবগঞ্জের
নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের রানীহাটি এলাকায় রোববার আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন নিহতসহ বোমাবাজি, ভাঙ্গচুর ও
লুটপাটের ঘটনায় মঙ্গলবারও থমথমে অবস্থা বিরাজ করেছে ইউনিয়নের ৭/৮টি গ্রামে। সংঘর্ষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় সোমবার রাতে
পুলিশ ২ জনসহ মোট ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। ফলে মামলা আত্মংকে গ্রাম ছেড়েছে কয়েকটি গ্রামের দুই শতাধিক পুরুষ।
এলাকাবাসী জানায়, এলাকায় আধিপত্য
বিস্তার নিয়ে আওয়ামীলীগের
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের এমপি আব্দুল ওদুদের ভায়রা ভাই মোস্তাকুল হক পিন্টু বাহিনী
ও বিএনপি আশরাফুল হক আশরাফ বাহিনীর রোববারের ৪/৫ ঘণ্টাব্যাপি নারকীয় তান্ডবসহ ব্যাপক
বোমাবাজির কারণে গতকাল মঙ্গলবারও আত্মংকের মধ্যে দিন কেটেছে নয়ালাঙ্গা ইউনিয়নের বাবুপুর, মিরাটুলি, গাইনপাড়া, মোড়লপাড়া, ঝাপড়াপাড়া, বিহরাহিমপুর
সুন্দরপুরের কোদলকাটি গ্রামের শত শত নারী-পুরুষের মাঝে। এসব এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
মোড়লপাড়া গ্রামের এক অধিবাসী জানান,
এলাকায় পুলিশ মোতয়েন থাকলেও সন্ত্রাসীরা দলবেধে প্রকাশ্যে মহড়া
দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ অনেক দিন এলাকা শান্ত ছিল, কিন' সন্ত্রাসীদের বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগ হওয়া পাশাপাশি আওয়ামীলীগ
থেকে বিএনপি হওয়াসহ তুচ্ছ ঘটনায় বোমাবাজির কারণে এলাকা আবারও অশান্ত হয়ে উঠলো। একজনকে জীবন দিতে হলো’। রোববারের সন্ত্রাসী হামলায় নয়ালাঙ্গা ইউনিয়নের অন্তত ৫টি গ্রামের বাড়ি-ঘর তছনছ ও লুটপাট হওয়া ৫০ টি পরিবারের
অধিকাংশই
এখনও অনেকটাই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। সংঘর্ষে বাড়ী ঘর ভাঙ্গচুরে সর্বস্বহারা নামোসুন্দরপুর ঝাপড়াপাড়া
গ্রামের রুনা খাতুন বিলাপ করে
বলেন, ‘ হামারসহ নামোসুন্দরপুরের ১৯ ট্যা ঘর ওরা (সন্ত্রাসীরা) পেট্রোল দিয়্যা পুড়িয়্যা
দিয়্যাছে। সব কিছু লুটপাক কোর্যা লিয়্যা গেছে। হামরা এখন নিঃশ্ব হোইয়্যা গেছি’। তিনি অভিযোগ করেন, যারা সন্ত্রাসী হামলা করে লুটপাট করেছে তারা
প্রকাশ্যে ঘুরে বেরাচ্ছে। পুলিশকে বললেও পুলিশ নিরব থাকছে। নয়ালাভাঙ্গার আলমের স্ত্রী জুলেখা জানান, তার স্বামী
বিএনপি করায় সন্ত্রাসীরা তার বাড়ি-ঘর ভাঙ্গচুর করে পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনেই
তারা এ সব ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে শিবগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা
যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাসিন আলী অভিযোগ করেন, বিএনপি নেতা আশরাফ বাহিনীর হাতে এলাকাবাসী
দীর্ঘ দিন ধরে আতিষ্ঠ। আশরাফের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসীরাই প্রথমে হামলা চালায়। বিএনপি নেতা আশরাফুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, পুলিশের
নিরবতায় আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা তার লোকদের বাড়ী-ঘর ভাঙ্গচুর, লুটপাট ও
অগ্নিসংযোগ করেছে।
এদিকে রোববার
সংঘর্ষ চলাকালে বোমা বিষ্ফোরণে নিহত নাইরুল ইসলামের ভাই সফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে শিবগঞ্জ থানায় ১শ ১৮ জনের নাম উলেস্নখসহ অজ্ঞাতনামা
৪০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করায় এলাকায় পুলিশী আত্মংক দেখা দিয়েছে। মামলায় বিএনপি নেতা
শিবগঞ্জ পৌর মেয়র শামীম কবির হেলিম,
নয়ালাভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল হকসহ বেশ কিছু বিএনপি নেতাকে
আসামী করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে দুই শতাধিক পুরম্নষ গ্রাম ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছে।
শিবগঞ্জ থানার
অফিসার ইনচার্জ জমির উদ্দীন জানান,
বর্তমানে পরিসি'তি শানত্ম রয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের মামলার এজাহারভুক্ত আসামী সেরাফত
(৪২) ও মমরেজ (৩৫) কে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। আগে গ্রেফতার করা হয়েছে বাবুল ইসলাম (৩৮)
নামের একজনকে। তিনি জানান, ওই এলাকায় স্থাপিত অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে
উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
অন্যদিকে বাড়ি-ঘর
ভাঙ্গচুর ও অগ্নি সংযোগে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে রোববার জেলা প্রশাসনের পড়্গ
থেকে শীত নিবারণ ও সহায়তা হিসেবে যে ৩০টি কম্বল ও ৮ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছিল তা
সোমবার ফেরত দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্থরা। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে
গিয়ে অফিস সুপারিনটেনডেন্ট’র কাছে টাকা ও কম্বল ফেরত দেন তারা। এ সময় তারা ত্রাণ নয়, সন্ত্রাসীদের
বিচার দাবি করেন।