চাঁপাইনবাবগঞ্জে অধরায় থেকে গেল আন্তঃনগর ট্রেনের দাবি


আন্তঃনগর ট্রেনের মাধ্যমে সরসারি ঢাকা যাতায়াতের দাবি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সর্বসত্মরের মানুষের দীর্ঘদিনের হলেও নানামুখি জটিলতায় আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত আন্তঃনগর ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর কাছে অধরায় থেকে যাচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী রেলপথ নির্মাণ/সংস্কার শেষে শ্যাটল ট্রেনের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর রাজশাহী হয়ে আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার সুবিধার ( ১ ফেব্রম্নয়ারি) এক বছর পূর্ণ হলেও একটি বাইপাস রেলওয়ে নির্মানে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে চালু হচ্ছেনা সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন।
পশ্চিমাঞ্চল রেলের শেষ প্রাপ্ত সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের ঢাকা যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘবসহ ব্যাবসা বাণিজ্যের প্রসারের জন্য বহু বছর ধরে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যনত্ম আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি করে আসছে জেলার সর্বসত্মরের মানুষ। দাবিটিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের শীর্ষদাবি হিসেবে চিহ্নিত করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানান শ্রেণী পেশার মানুষ বহুবার বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেছে। সাধারণ মানুষের জোরালো এই দাবির মূখে এবং রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী-রহনপুর বর্ডার এবং আমনুরা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সেকশন সমূহ পূণর্বাসন প্রকল্প নামের একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে। যা অনুমদিত হয় ২০০৭ সালে। মধ্যখানে দীর্ঘ ৩ বছর প্রকল্পের নানামুখি দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড শেষে  ২০১১ সালে ঠিকাদার নিয়োগসহ অন্যান্য কাজ শুরম্ন হয়। এর জন্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১ শ ৫৬ কোটি টাকা। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী থেকে রহনপুর এবং আমনুরা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ মোট ৯২ কিলোমিটার রেলপথ সংস্কার কাজ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন ও জনপ্রতিনিধিদের তদবিরে পশ্চিম রেলের সাম্প্রতিক সময়ে বৃহৎ এই প্রকল্পে রেলপথ সংস্কার ও লিংকিং কাজ হলেও স্থান পায়নি আমনুরা বাইপাস রেলপথ স'াপন। ওই সূত্র জানিয়েছে, মূল প্রকল্পে আমনুরা বাইপাস রেলপথ স্থান না পাওয়ায় প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যনত্ম সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর ব্যাপারে। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, মূল প্রকল্পে আমনুরা বাইপাস স'ান না পাওয়ার পরেও মধ্যখানে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল আমনুরায় বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের যায়গা নির্ধারণ নিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জেলায় নতুন বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মানের জন্য আমনুরা রেলওয়ে জংশনের দড়্গিণপার্শ্বে যায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই সময় যায়গা নির্ধারণ নিয়ে প্রতিবাদ করা না হলে বাইপাস নির্মাণের সম্ভাবনাটুকুও মুছে যেত। তিনি বলেন, ‘ রেলের এক সাহসী কর্মকর্তা ওই সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কাছে যায়াগা নির্ধারণের বিরোধীতা না করলে এবং পাওয়ার প্লান্ট নির্মান হয়ে গেলে বাইপাস নির্মাণ স্বপ্নেরই মৃত্যু ঘটতো’।
এদিকে মূল প্রকল্পে বাইপাস নির্মান স্থান না পাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ স্বোচ্চার হয়ে উঠলে ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠের এক জনসভায় সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালু’র প্রতিশ্রম্নতি প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রম্নতির পর মূল প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষের মাথায় গত বছরের ১ ফেব্রম্নয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ‘আনত্মঃনগর’ স্যাটল ট্রেনের। তৎকালিন রেল মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত উদ্বোধন করেন শ্যাটল ট্রেনের। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, উদ্বোধনের দিন থেকেই শ্যাটল ট্রেনটি আন্তঃনগর সংযোগ ট্রেন হিসেবে কাজ করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর’র টিকিট কাটা যাত্রীরা  শ্যাটল ট্রেনে রাজশাহী গিয়ে আনত্মঃনগর ট্রেনের নির্ধারিত আসনে ঢাকা যাচ্ছে।
আনত্মঃনগরের পরিবর্তে শ্যাটল ট্রেন নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ ‘সন'ুষ্ট’ থাকলেও যাত্রা শুরম্নর দুই তিন মাসের মাথায় রেলের নতুন সিদ্ধানত্ম বিপাকে ফেলে যাত্রীদের। ওই সিদ্ধানেত্ম প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দেয়া হয় টিকিটের সংখ্যা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, শুরম্নতে স্নিগ্ধা, এসি ও সোভন চেয়ার মিলিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে টিকিট দেয় হয় ৪৯ টি। হটাৎকরে সোভন চেয়ার টিকিট ৪০টি থেকে কমিয়ে নামিয়ে দেয়া হয় মাত্র ১৫টিতে। এখন তা ৩০টিতে উন্নিত হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার মনিরম্নজ্জামান বলেন, ‘এখানে টিকিটের চাহিদা প্রচুর। কম টিকিটে বেশী যাত্রী ম্যানেজ করতে হিমশীম খেতে হচ্ছে। যাত্রীদের সনেত্মাষ্ট রাখতে প্রায় সময় রাজশাহী থেকে টিকিট ম্যানেজ করে দিতে হয়’। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, সরাসরি আনত্মঃনগর ট্রেন চালু হলে টিকিট সমস্যাও সমাধান হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এ- কলেজের ছাত্র আসাদুলস্নাহ আনত্মঃনগর ট্রেন দাবি করে বলেন, ‘, ‘ট্রেনে যাতায়াত খুবই আরামদায়ক এবং নিরাপদ। ভাড়াও কম। তাই হামরা ম্যালা দিন আগে থ্যাক্যাই চ্যাহ্যাছিনু ভাল ট্রেনে সরাসরি ঢাকা যাইতে। স'ানীয় এমপি  আশ্বাস দিয়্যাছিলেন গত জুন-জুলাই-এর মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন চালু হোবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রম্নতও ছিল কিন' তারপরেও তা চালু না হওয়ায় হামরা হতাশ’।
রেলওয়ের সংশিস্নষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আন্তঃনগর ট্রেন চালু না হওয়ার পেছনে বড় অনত্মরায় আমনুরা বাইপাসসহ একটি ওয়াসপিট নির্মাণ এবং বগি’র স্বল্পতা। ট্রেনের মেইনটেইনেন্স ও ধোয়ামোছার জন্য একটি ওয়াসপিট নির্মানের চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ের যায়গা রয়েছে। শুধু প্রয়োজন সরকারি সদিচ্ছা। ওই সূত্র জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেলের যাত্রী সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধির প্রেড়্গিতে আমনুরা বাইপাস নির্মাণের বিষয়টি গুরম্নত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ সালাউদ্দীন জানান, ইতোমধ্যে আমনুরা বাইপাসের ২১ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়, নক্সা তৈরীসহ ডিপিপি প্রস'ত করে রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একনেকের অনুমোদনসহ অর্থ বরাদ্দ হলেই নির্মাণ করা সম্ভব হবে আমনুরা বাইপাস।

Flag Counter
পাঠকের সবধরনের মত তুলে ধরতে চাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ । যে কোন বিষয় নিয়ে আপনিও লিখুন আর পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে. সাথে আপনার যোগাযোগের ঠিকানা ,আপনার একটি ছবি পাঠাতে ভুলবেন না।আপনার লেখা বা ছবি আমাদের ইমেল করুন chapainawabganjnews@yahoo.com