শহরের বাতেন খাঁ মোড় এলাকায় গোরস্থানের পার্শ্বে ফুটপাতে খোলা আকাশের নীচে সবজির বড়া বিক্রি করে কোন রকমে সংসার চলতো এবাদত। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে এলাকার মধ্যবিত্ত আর নি¤œ বিত্তের মানুষের বিকেলে নাস্তার যোগন দিত সে। শুধু তাই নয় ফুটপাতে ওই দোকান বিকেলের নাস্তা সারতেন জেলার অনেক হেভিওয়েট নাগরিকও। আর তা থেকে অর্জিত সামান্য মুনাফা ছিল তার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। যৎসামান্য আয় দিয়েই সে তার ৫ ও ২ বছর বয়সী দুই সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের বুনতো এই ফুটপাতে বসেই। কিন্তু এবাদতের সব স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে হঠাৎ ছুটে আসা নিষ্ঠুর পুলিশের বুলেট। প্রতিদিনের মতো সেদিন দিনও দু’চারটি টুল-চেয়ার সাজিয়ে চালছিল তার ব্যবসা। হঠাৎই একটি ঝটিকা মিছিল বের করে শিবির কর্মীরা। মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফকে গ্রেফতার ও রাজশাহীতে র্যাবের এনকাউন্টারে শিবির কর্মী নিহত হওযার প্রতিবাদে এই মিছিল। মিছিলটি শান্তিমোড় এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে ফেরার পথে বাতেখাঁ মোড় এলাকায় টহলরত একটি পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে হঠাৎ করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে আইন-শৃংখলা বাহীনির সাথে সংঘর্ষের সূত্রপাত করে শিবির কর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে দায়িত্বজ্ঞান হীন পুলিশও আবাসিক ও জনবহুল এলাকায় দাঁড়িয়ে বেপরোয়াভাবে পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। এসময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই বুকে গুলিবিদ্ধ হয় এবাদুল। সোমবার বিকেলে রেহাইচর এলাকার আদর্শ গ্রামের জীর্ণ এবাদতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় লাশের প্রতীক্ষা প্রহর গুনছে তার পরিবার। এসময় এবাদতের পিতা মহসিন মিস্ত্রিকে দেখা যায় বিলাপ করতে। যুবক সন্তান হারিয়ে তিনি এখন পাগল প্রায়। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, বাবা আমার ছেলে কোন দল পার্টি করতো না, সারাদিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতো। এখন আমাদের কি হবে, কিভাবে সংসার চবলবে। আমি আমার নাতি-নাতনিদের নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো। এসময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আর এবাদুতের বিধবা স্ত্রীকে দেখা যায় নির্বাক তাকিয়ে থাকতে। তবে এবাদুতের অবুঝ দুই সন্তান এখনও বুঝে ওঠতে পারেনি দেশের অসুস্থ রাজনীতির শিকার হয়ে তাদের নির্দোষ পিতা চিরদিনের মতে চলে গেছে তাদের ছেড়ে।
প্রত্যদর্শীরা জানায়, শিবির কর্মীদের অবস্থান ছিল বাতেন খাঁর মোড়ের দনি ও পশ্চিম দিকে। আর এবাদতের অবস্থান ছিল উত্তরদিকে গোরস্থান দেয়ালের পাশে। তাহলে সেদিক থেকে কোন আক্রমন না থাকার পরও এবাদত কেন এবং কিভাবে গুলিবিদ্ধ হলো। সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ওই দিনের সংহিসতার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় আসামী হয়েছে নিহত নিরীহ ফুটপাত ব্যবসায়ী এবাদতকে। এবাদতের পরিবার ও এলাবাসীর দাবী পুলিশ নিজেদের বাঁচাতে নিজেদের মতো করে মামলা সাজিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার সন্ধ্যায় মিছিল শেষে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায় শিবির কর্মীরা। এসময় পুলিশ পাল্টা গুলি ছুঁড়লে ফুটপাত ব্যবসায়ী এবাদুল গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ও পরে আশংকাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এবাদত পৌর এলাকার রেহাইচর আদর্শ গ্রামের মহসিন মিস্ত্রির ছেলে। এদিকে আবাসিক ও জনবহুল এলাকায় পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণে এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ ও আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। এলাবাসীর দাবী এখনই দরকার এধরনের অসুস্থ রাজনীতি কঠোর হস্তে দমনের। আর আবাসিক ও জনবহুল এলাকায় পুলিশের নির্বিচারে গুলি বন্ধের। তাদের দাবী নিরীহ এবাদত হত্যার সুষ্ঠু বিচারের।
এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার বশির আহম্মেদ জানান, রাজশাহী হাসপাতালে একটা লোক মারা গেছে, আইনগত ব্যবস্থা তারাই গ্রহণ করছে। আবাসিক ও জনবহুল এলাকায় পুলিশের গুলিবর্ষণের বিষয়ে তিনি জানান, এবিষয়ে আমি কোন কমেন্টস্ করবো, পুলিশ আত্মরক্ষার্থে যেকোন অবস্থায় যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, আমি এলাকাবাসী বা সাংবাদিকদের সাথে এবিষয়ে কোনকথা বলবো না।